বৃষ্টি রহমতের নিদর্শন হলেও কখনও তা আজাবের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হাদিস অনুযায়ী, প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া বইলে রাসুলুল্লাহ (স.) নামাজে মশগুল হতেন। সাহাবাদের জীবনেও দেখা যায়, তারা বিপদে-মুসিবতে নামাজে দাঁড়াতেন ও ধৈর্য ধারণ করতেন। আল্লাহ তাআলা মূলত কিছু কিছু বিপদ-আপদ ও বালা-মুসিবত দিয়ে মানুষকে সতর্ক করেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে—
‘আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান, মাল ও ফলফলাদির ক্ষতির মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা, নিজেদের বিপদ-মুসিবতের সময় বলে, “নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী”, তাদের ওপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফেরাত ও রহমত এবং তারাই হেদায়াতপ্রাপ্ত।’ (সুরা বাকারা: ১৫৫-১৫৭)
ঘূর্ণিঝড়সহ সকল দুর্যোগে যে আমল করা সুন্নত
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কিছু করণীয় সুন্নত আমল রয়েছে। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, যখন কোথাও ভূমিকম্প, সূর্যগ্রহণ, ঝড়ো বাতাস বা বন্যা হয়, তখন সবার উচিত মহান আল্লাহর কাছে তওবা করা, নিরাপত্তার দোয়া করা, মহান আল্লাহকে স্মরণ করা এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। এক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ (স.) নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘দ্রুততার সঙ্গে মহান আল্লাহর জিকির করো, তার নিকট তওবা করো।’ (বুখারি: ২/৩০; মুসলিম: ২/৬২৮)
ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ নানান দুর্যোগে আশ্রয় ও যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়ার পরও মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করা সুন্নত। আয়েশা (রা.) বলেন, যখন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হতো এবং ঝড়ো বাতাস বইত, রাসুলুল্লাহ (স.)-এর চেহারায় চিন্তার রেখা ফুটে উঠত। এই অবস্থা দেখে তিনি এদিক-সেদিক পায়চারি করতে থাকতেন এবং এ দোয়া পড়তেন—
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা-ফিহা ওয়া খাইরা মা-উরসিলাত বিহি, ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা-ফিহা ওয়া শাররি মা-উরসিলাত বিহি।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করি এই ঝড়ের কল্যাণ, এর মধ্যস্থিত কল্যাণ, এর সঙ্গে প্রেরিত কল্যাণ। আমি আপনার নিকট পানাহ চাই এই ঝড়ের অনিষ্ট থেকে, এর মধ্যস্থিত অনিষ্ট থেকে, এর সঙ্গে প্রেরিত অনিষ্ট থেকে। (বুখারি ও মুসলিম)
প্রবল বৃষ্টিপাতের সময় যে দোয়া পড়বেন
বৃষ্টিপাত বেশি হলে সময় মহানবী (স.) এই দোয়া পড়তেন—
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা হাওয়া-লাইনা, ওয়ালা আলাইনা; আল্লাহুম্মা আলাল আ-কাম ওয়াজ জিরাব ওয়া বুতুনিল আওদিআ; ওয়া মানাবিতিস শাজার। (বুখারি: ১০১৪)
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের আশপাশে বৃষ্টি দিন, আমাদের ওপরে নয়। হে আল্লাহ! পাহাড়-টিলা, খাল-নালা এবং গাছ-উদ্ভিদ গজানোর স্থানগুলোতে বৃষ্টি দিন। এরপর যখন বৃষ্টি হতো, তখন মহানবী (স.) শান্ত হতেন।
আয়েশা (র.) আরও বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছি যে, লোকজন মেঘ দেখলে বৃষ্টির আশায় আনন্দিত হয়ে থাকে, আর আপনি তা দেখে চিন্তিত হয়ে পড়েন?’ এর জবাবে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আমি এই ভেবে শঙ্কিত হই যে, বৃষ্টি আমার উম্মতের ওপর আজাব হিসেবে পতিত হয় কি না। কেননা আগের উম্মতদের ওপর এ পদ্ধতিতে (বৃষ্টি বর্ষণের আকারে) আজাব পতিত হয়েছিল। ’ (বুখারি: ৩২০৬; মুসলিম: ৮৯৯; তিরমিজি: ৩৪৪৯)
ঘূর্ণিঝড় ও বিপদাপদ থেকে নিরাপদ থাকতে পবিত্র কোরআনের বিশেষ দোয়া- ‘রাব্বানাকশিফ আন্নাল আজাবা ইন্না মুমিনুন’
অর্থ: ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের উপর থেকে আপনার শাস্তি প্রত্যাহার করুন, আমরা বিশ্বাস স্থাপন করছি।’ (সুরা দুখান: ১২)
প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়াতে করণীয়
মানুষ আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির সেরা জীব। তিনি অযথা শাস্তি দিতে চান না। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ হলো আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি। আল্লাহর আজাব থেকে বাঁচার জন্য আমল পরিশুদ্ধ করার বিকল্প নেই। সুতরাং সময় থাকতে আলোর পথে ফিরে আসা এবং নামাজ, তেলাওয়াত, দোয়া ও জিকির-আজকারে মাশগুল হওয়া মুমিন মুসলমানের জন্য বাঞ্ছনীয়। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঘূর্ণিঝড়সহ সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপদাপদ থেকে হেফাজত করুন। সহিহ সুন্নাহ অনুযায়ী দোয়া ও আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।